:user: vai
www.itsomadhan.blogspot.com

Translate

Friday, August 17, 2018

আমাদের বাড়ি পটুয়াখালী। কিন্তু আমার জন্ম সৌদি আরবে। বাবা অধ্যাপনা করতেন কিং ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার যখন আট বছর বয়স তখন আবার সবাই দেশে ফিরে আসি। আমাকে ভর্তি করানো হয়েছিল মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে চলে যাই অক্সফোর্ড

 ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। ব্যাডমিন্টন আর ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ করতাম। ইলেকট্রনিকস বিষয়েও আমার আগ্রহ ছিল অনেক। সার্কিট বানাতেও শিখে গিয়েছিলাম ওই বয়সে। অনেক দিন গেছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু সার্কিট বানিয়ে গেছি। মা বরং উৎসাহ দিয়েছেন। স্টেডিয়াম মার্কেটে নিয়ে গিয়ে ইলেকট্রনিক পার্টস খুঁজে দিয়েছেন। স্কুলবেলাতেই অনেক বই পড়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার বড় বোনের বড় একটা লাইব্রেরি ছিল। মুখস্থবিদ্যায় দুর্বল ছিলাম সার্কিটটার্কিট বানাতে গিয়ে ইলেকট্রিক শক খেতাম। ঝালাই করতে গিয়ে একবার হাত পুড়েও গিয়েছিল। মা একটা কোর্স করার পরামর্শ দিলেন। স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় বরাবরই প্রথম হতাম। তবে ক্লাসে কিন্তু নিচের দিকে থাকত রোল নম্বর। মুখস্থবিদ্যায় আমি দুর্বল ছিলাম। তবে ও লেভেলে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। কিন্তু এ লেভেলে খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিল। এক বছরের মাথায় মাত্র দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম। ওই রেজাল্ট নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াও সম্ভব ছিল না। ওদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ জোগানো আমার জন্য কঠিন ছিল। তাই কম্পিউটার বিষয়ে কোর্স করতে গেলাম। ইন্টারনেট আর নেটওয়ার্কিংয়ে আমার দক্ষতা গড়ে উঠল দ্রুতই। তারপর টেক উদ্যোক্তাদের মতো একটি বিজনেস প্ল্যান দাঁড় করিয়ে ফেলি। লোন নিতে ব্যাংকেও গিয়েছিলাম।তখন গ্রামীণ সাইবারনেট ছিল দেশের বড় আইএসপিগুলোর একটি। হঠাৎ কী হলো একদিন তাঁদের ডোমেইনের মালিকানা ও ডিএনএস কনফিগারেশন আমার কাছে ট্রান্সফার হয়ে গেল। তাদের ব্যবহারকারীদের সব ই-মেইল আসা শুরু হলো আমার কাছে। আমি তাদের সিস্টেম হ্যাক করেছিলাম কি না বলতে পারব না। মানে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে কিছু একটা হয়ে থাকতে পারে। যা হোক মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই সব কিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কাজ করতে থাকলাম। সংবাদপত্রে ‘এক কিশোরের গ্রামীণ সাইবারনেট হ্যাকিং’ শিরোনামের খবরও ছাপা হয়েছিল। বহুদিন কোর্টে হাজিরাও দিতে হয়েছিল। যা হোক হ্যাকিং ব্যাপারটি আমাকে বড় সুযোগও এনে দিয়েছিল। দেশের আরেকটি বড় আইএসপি ব্র্যাকনেটের ডোমেইন হ্যাক হয়ে গিয়েছিল একবার। তারা সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমার সহায়তা চেয়েছিল। তবে আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম, হ্যাকিং যতই আকর্ষণীয় হোক এটা আসলে বিশাল অপচয়। বরং গঠনমূলক কাজে সময় দেওয়াই ভালো। একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম নতুন একটা আইএসপির (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল পত্রিকায়। তারা সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর চাইছিল। ওয়াক-ইন ইন্টারভিউ। আমি ইন্টারভিউ দিয়ে পরদিন থেকেই কাজ করতে শুরু করলাম। মাস ছয়েকের মধ্যেই আমাদের গ্রাহক সংখ্যা দুই হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন সারা দেশেই মূলত টেলিফোনের মাধ্যমে ডায়াল-আপ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদান করা হতো। যা হোক এর মধ্যে আমি এআইইউবিতে অ্যাডমিশনও নিয়েছিলাম। মা-বাবার উৎসাহে পড়াশোনায় মন দিলাম। সুখের কথা হলো, শেষ পর্যন্ত সিজিপিএ চারে চার নিয়ে পাস করি। এআইইউবির ইতিহাসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রগ্রামে সেটাই প্রথম পারফেক্ট ৪.০। যেভাবে গেলাম গুগলে তৃতীয় সেমিস্টারে প্রগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের ক্লাস পেয়েছিলাম। ওই সময় থেকেই প্রগ্রামিংয়ে আমার নেশা ধরে গেল। অনলাইনে প্রগ্রামিং প্রবলেম সমাধান করা শুরু করলাম। পরের দুই বছরে এক হাজার ২০০ বা এক হাজার ৩০০ প্রবলেম সলভ করলাম। সে সময় স্পেনের ভ্যালাডলিড বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্রগ্রামিংয়ের সেরা প্ল্যাটফর্ম। তাদের র‌্যাংকিংয়ে আমি ১৫ নম্বরে উঠে গিয়েছিলাম। ২০০৪ সালে বুয়েটের সিএসই ডেতে আমার প্রগ্রামিং টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখনকার বিশ্বে দলগত প্রগ্রামিং প্রতিযোগিতার সেরা আসরের নাম এসিএম ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রগ্রামিং কনটেস্ট। ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট দলগুলোর সাক্ষাৎকার নিত বড় বড় সব টেক কম্পানি। আমার টিম দু-দুবার খুব কাছে চলে গিয়েছিল। আর একক প্রতিযোগিতায় জনপ্রিয় ছিল টপ কোডার। একসময় গুগল এখানে কোড জ্যাম নাম দিয়ে একটি গ্রগ্রামিং কনটেস্ট চালু করে। ফাইনাল ছাড়া অন্য পর্বগুলো হতো অনলাইনে। শেষ পর্বটা যখন চলছিল তখন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। আমার ইউপিএস বা জেনারেটর কিছুই ছিল না। কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেল। অন্ধকারে বোকার মতো বসে রইলাম। কিন্তু জেদ চেপে গেল। বিদ্যুৎ আসামাত্রই কম্পিউটার অন করে ফটাফট কোড শেষ করে আর কিছু না ভেবে জমা দিয়ে দিলাম। কয়েক সেকেন্ড মাত্র বাকি ছিল। আমি ফাইনালের জন্য সিলেক্ট হলাম। ফাইনালিস্টদের গুগল নিয়ে গেল তাদের অফিসে। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার দেওয়া হলো আর ঘোষণা করা হলো, আগামী দিন হবে ইন্টারভিউ। আমি বিরাট এক ঘুম দিয়ে সকালে ইন্টারভিউর জন্য হাজির হয়ে গেলাম। কিন্তু ইন্টারভিউটা মোটামুটি হলো। প্রথম প্রথম ভালোই হচ্ছিল, শেষ দিকটায় গোলমাল বেঁধে গিয়েছিল। দেশে ফিরে এলাম। তারপর কয়েক দিন পর ই-মেইল পেলাম। আরেকটি ইন্টারভিউ দিতে হবে, ফোনে। দিলাম। তারপর আবার অনেক দিন পর পর সিভি চাইল, সার্টিফিকেট চাইল, রেফারেন্স চাইল। শেষে মেইলটা এসেই গেল। গুগল আমাকে জব অফার দিল। একপর্যায়ে ভিসার ঝামেলা মিটিয়ে আমি উড়াল দিলাম। ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের হেডকোয়ার্টার। গুগলে যা যা করি আমার পদবি হলো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গুগলের ব্যাকএন্ড সিস্টেম নিয়ে ছিল আমার প্রথম প্রকল্প। গুগল যে সার্ভিসগুলো দেয় সেগুলো উন্নত ও বিস্তৃত করার কাজ ছিল সেটি। প্রগ্রামিং জানি বলেই আমার জন্য কঠিন ছিল না কাজটি। খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান বের করে কোড করে ফেলতাম। তাই আমার ম্যানেজার বেশির ভাগ কঠিন কাজ নিয়ে আমার কাছেই আসতেন। একসময় বড় বড় সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব পেলাম। সেগুলোর জন্য প্রথমে কারিগরি নকশা করতে হতো। সিনিয়র ইঞ্জিনিয়াররা সেগুলো করে দিতেন। তারপর আমরা কয়েকজন মিলে সেগুলোর কোডিং করতাম। একটা সময় আমি গুগলের কোড বেইজে এক নম্বর ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলাম। গুগলের অর্গানোগ্রামে দুটি শাখা। একটি ম্যানেজার অন্যটি ইঞ্জিনিয়ার। প্রমোশন পেতে পেতে আপনি সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেন। আর ব্যবস্থাপনায় গেলে সিনিয়র ম্যানেজার ইত্যাদি হতে পারেন। আমি ইঞ্জিনিয়ারই হতে চেয়েছি। আমি তাই সিনিয়র স্টাফ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মানে টেকনিক্যাল লিড হলাম। জুরিখে আমার টিমে প্রায় ৫০ জন ইঞ্জিনিয়ার আছেন। আমি এখানে ইঞ্জিনিয়ারদের ম্যানেজার। এই ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন, বোনাস, গ্রেডিং—সব আমিই করি। আমি এখন গুগলের শেয়ারহোল্ডারও (এটা অবশ্য স্থায়ী কিছু নয় বরং প্রকল্পনির্ভর)। গুগল সার্চ, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, গুগল প্লাস প্রকল্পে আমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ২০১৩ সালে গুগল সার্চ টিমে যোগ দিই। তখন সার্চের জন্য কিছু নতুন ফিচার তৈরির সুবাদে প্রমোশনও পেয়েছিলাম। ফিচারগুলোর একটি ছিল লাইভ টেলিভিশন প্রগ্রামের ভোটিং হোস্ট করা। তখন আমেরিকার বড় লাইভ টিভি শো ছিল আমেরিকান আইডল। সেটির ভোটিং হোস্ট করার সুযোগ তৈরি হয়ে যায় ওই ফিচারটির বদৌলতে। অনুষ্ঠানের দিন আমাকে বাহবা দিতে এসেছিলেন গুগল সার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বলেছিলেন, তুমি একটি স্বপ্নকে সম্ভব করলে।’ আবার দেখুন, গুগলে ভয়েস সার্চ উন্নত করতে গিয়েই কিন্তু একটি নতুন ইন্টারফেসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। আর তা থেকেই জন্ম নেয় গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট উন্মুক্ত হওয়ার পর ২০১৬ সালে আরেকটি প্রমোশন পাই। সারা পৃথিবীতে প্রায় আধা লাখ কর্মী গুগলের। এখন আমার ওপরে আছেন মাত্র ৪০০-৫০০ জন। আমি মনে করি, সার্চ যদি গুগলের শুরু হয় তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট হচ্ছে গুগলের ভবিষ্যৎ। জুরিখ অফিস প্রথম যখন আসি, তখন জুরিখ অফিসে ভবন একটিই ছিল। কিন্তু ভবনটি ছিল অসম্ভব সুন্দর। হেডকোয়ার্টারে মানুষ অনেক বেশি। ভবনও অনেক। জুরিখ অফিসে সে তুলনায় মানুষও অনেক কম। আমেরিকায় মানুষ খালি দৌড়ায়। কথার সঙ্গে কাজের মিলও কম। জুরিখে কিন্তু উল্টো। এই দেশটায় অপরাধ নেই বললেই চলে। আমি গুগলকে ধন্যবাদ জানাই জুরিখে আমাকে ট্রান্সফার করার জন্য। এখানে জীবন অনেক সুন্দর। পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি, এমন দেশ সত্যি দেখিনি।

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Pomot Your Website & Facebook Fun Page Contact me +8801914656495

ফেসবুকে আমাদের সাথে থাকুন

আপনে কি সিসি টিভি লাগার কথা ভাবতিছেন??বিস্তারিত জানতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন!

SCIENTIFIC CALCULATOR

powered by calculator.net

Only call Argent +8801914656495

Powered by Blogger.

Ad heare

cc

Featured Posts

Our facebook Page