উপগ্রহ
বা স্যাটেলাইট মহকাশে নিজস্ব কক্ষপথে গ্রহের চারদিকে ঘুরে। চন্দ্র পৃথিবীর একটি স্বাভাবিক স্যাটেলাইট। এটি নিজ কক্ষপথে পৃথিবীর চতুর্দিকে পরিক্রমণ করে। এরকম গ্রহেরই নিজস্ব স্বাভাবিক স্যাটেলাইটগুলো আছে। আর মানুষের তৈরি উপগ্রহকেও বলা হয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ। এগুলো পৃথিবীতে তৈরি করা এবং রকেটের সাহায্যে পৃথিবীর চতুর্দিকে পরিক্রমণের জন্য এদের নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপিত করা হয়।
একটি
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যেমনিভাবে একটি বাদামকে সুতায় বেঁধে দ্রুত ঘোরানো যায়। এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা
বহির্মুখীন শক্তি ওকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি স্যাটেলাইটকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং সাটেলাইটটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে। যেহেতু মহাকাশে বায়ুর অস্তিত্ব নেই তাই বাধাহীনভাবে পরিক্রমণ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পৃথিবীর নিকটতম স্থানে প্রবেশ করে এবং উচ্চস্তরীয় বায়ুমণ্ডল স্যাটেলাইটকে টেনে আনবে এবং তার গতি মন্থর করে দেবে। স্যাটেলাইটগুলো বৃত্তাকারে
পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির। তার পৃথিবীর নিকটতম পরিক্রমণ স্থানকে বলে পেরেগি এবং দূরতম পরিক্রমণ স্থানকে বলে এপগি।
১৯৫৭
সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম স্যাটেলাইট সপুৎনিক নিক্ষেপ করে। তারপর থেকে ১ হাজার ৫০০ শ’র বেশি কৃত্রিম স্যাটেলাইট নিক্ষেপ করা হয়েছে। বর্তমানে এই স্যাটেলাইটগুলো অনেক
প্রয়োজনীয় কর্মসাধন করছে। মেটিরিওলজিক্যাল স্যাটেলাইট, আবহাওয়া সংক্রান্ত কাজে সাহায্যকারী কৃত্রিম স্যাটেলাইটের কথাই ধরা যাক ঃ বিস্তারিতভাবে আবহাওয়ার অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য মেটিরিওলজিক্যাল স্যাটেলাইট
নির্মাণ করা হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ থেকে কয়েক শ মাইল উপরে আবহাওয়া সংক্রান্ত স্যাটেলাইট নিজ কক্ষপথে পৃথিবীর চারদিকে পরিভ্রমণ করে। এগুলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নির্ণয় করে এবং বায়ুর মধ্যে আর্দ্রতা বা ঈষৎ আর্দ্রতার পরিমাণ নির্ণয় করে। পৃথিবীর ওপর মেঘ ও ঝড়ের অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা সম্পর্কে টেলিভিশনে গৃহীত ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ করে। এভাবে সংবাদ পাওয়ার ফলে বৈজ্ঞানিকরা অধিকতর নিশ্চয়তার সাথে নির্দিষ্ট এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারেন এবং ঝড়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পারেন।
প্রথম আবহাওয়া সংক্রান্ত স্যাটেলাইট ভ্যানগার্ড-২ ১৯৫৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। এটা আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাতে পারত। বিস্তারিতভাবে পৃথিবীর আবহাওয়া সংক্রান্ত ছবি যে স্যাটেলাইট প্রথম পাঠাতে সক্ষম হয়, তা হলো টাইরোস-১, তা ১৯৬০ সালের ১ এপ্রিল পৃথিবী থেকে নিক্ষিপ্ত হয়। ওই বছরই ২৩ নভেম্বর টাইরোস-২ পৃথিবী থেকে বিচ্ছুরিত ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মি পরিমাপ করে এবং আবহাওয়ার ছবিও সংগ্রহ করে। ১৯৬১ সালের ১২ জুলাই নিক্ষিপ্ত টাইরোস-৩ আটলান্টিক মহাসাগরের হারিকেন ইথার নামক ঝড় প্রথম আবিষকার করে। এ ক্ষেত্রে হারিকেনের কারণে যেসব অঞ্চল আক্রান্ত হতে পারে সেসব অঞ্চলকে আগেই সতর্ক করা হয়। এই ধারাবাহিক উপগ্রহমালার অনেক উপগ্রহ নিক্ষিপ্ত হয় যা তাপমাত্রা নির্ণয় করে মহাকাশে ইলেকট্রনের ঘনত্বের পরিমাপ করে। এই ধারাবাহিক উপগ্রহমালার টাইরোস-ঢ ১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মকালে নিক্ষিপ্ত হয়।
টাইরোস উপগ্রহমালার পর ঈসা এবং তারপর নিশ্বাস উপগ্রহমালা মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৫ মে নিক্ষিপ্ত নিশ্বাস-২ উপগ্রহ পৃথিবীর উত্তাপের ভারসাম্য পরিমাপ করে। নিশ্বাস-১ হারিকেন ডেটার অনুসনধান দেয়।
প্রণালী উদ্ভাবন করে।
মানুষ
জীবন ও ধনসম্পত্তির ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত স্যাটেলাইটগুলো হারিকেন, বন্যা ও অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে আগেই সতর্কতা প্রদান করে থাকে। প্রায় সব স্যাটেলাইট মেঘের ফটোগ্রাফ গ্রহণ করে। ম্যাগনেটিক টেপে সংবাদ জমা করে এবং তারপর টেলিমিটার দিয়ে গ্রাউন্ড স্টেশনে রক্ষিত কম্পিউটারে সোজাসুজি প্রেরণ করে। পৃথিবীর ওপর সেই সময় অবস্থানকারী মেঘের প্রণালীর ছবি পুনরুৎপাদনে সক্ষম হয়।
টাইরোস উপগ্রহমালার পর ঈসা এবং তারপর নিশ্বাস উপগ্রহমালা মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হয়। ১৯৬৬ সালের ১৫ মে নিক্ষিপ্ত নিশ্বাস-২ উপগ্রহ পৃথিবীর উত্তাপের ভারসাম্য পরিমাপ করে। নিশ্বাস-১ হারিকেন ডেটার অনুসনধান দেয়।
প্রণালী উদ্ভাবন করে।
0 comments:
Post a Comment